রসুন ঠান্ডা আবহাওয়া চাষের জন্য অনুকূল। রসুন লাগানোর পর অতিরিক্ত গরম, মেঘলা আবহাওয়া বা বেশী বৃষ্টিপাত হলে কন্দ ভালোভাবে গঠিত হয় না। অধিক বৃষ্টিপাত ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় রোগ বালাই ও পোকামাকড় এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায় যা কন্দ উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
রসুন গাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং বাল্ব পরিপক্ব হওয়ার জন্য বড় দিন ও শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়।
কেমন মাটিতে রসুন চাষ করতে হবে?
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটিতে রসুন ভাল জন্মে। এঁটেল বা এঁটেল দো-আঁশ মাটিতেও এর চাষ হতে দেখা যায়। এঁটেল মাটির কন্দ সুগঠিত হয় না এবং ফসল তোলার সময় অনেক কন্দ থেৎলে যায় বলে বেশীদিন ঘরে রাখা যায় না।
মাটির অম্লমান ৫.২-৬.৮ হলে রসুনের ভালো ফলন হয়। বালি মাটিতে রসুন খুব একটা ভাল হয়না। উচ্চক্ষারীয় লবনাক্ত মাটি রসুনের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।
জাত নির্বাচনে করনীয়।
বারি রসুন-১/বারি রসুন-২/বারি রসুন-৩/বারি রসুন-৪/বাউ রসুন-২/বিনা রসুন-১
বীজহার
বীজ হিসাবে রসুনের কোয়া ব্যবহৃত হয়। পূর্ববর্তী বছরের উৎকৃষ্ট ফসল থেকে বড় বড় কন্দ বেছে নিয়ে তার কোয়া ব্যবহার করা হয়। কোয়ার ওজন ০.৭৫ থেকে ১.০ গ্রাম।
কোয়ার আকার অনুযায়ী ও জাত ভেদে হেক্টর প্রতি ৬০০-৭৫০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বিঘা প্রতি ৮০-১০০ কেজি এবং শতক প্রতিঃ ২.৫-৩.০ কেজি।
রসুনের জীবনকাল ১৩৫-১৪০ দিন। ১৫ই অক্টোবর- ১৫ই নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে রসুনের কোয়া রোপণ করতে হয়।
ফারো পদ্ধতিতে সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ চাষকৃত দোঁ-আশ মাটিতে লাঙ্গল দিয়ে সোজা নালা তৈরি করে কোয়া রোপন করা হয়। ফারো রোপন পদ্ধতি রসুন চাষের জন্য ভাল। একটি আদর্শ ৪ মিটার লম্বা এবং ১.৫ মিটার প্রস্থের তৈরিকৃত ব্লকে রো কোদাল দিয়ে ২.৫-৩.০ সে.মি. গভীরে নালা করে ১০ সে.মি. অন্তর সারি করে, প্রতি সারিতে ৭ সে.মি. দূরে রসুনের কোয়া লাগানো হয়।
ডিবলিং পদ্ধতিতে নরম মাটিতে সুতা দিয়ে লাইন করে কোয়া মাটিতে পুতে দেওয়া হয়।
রসুনের জমি ঝুরঝুরে করে প্রস্তুত করা দরকার। পূর্ববর্তী ফসল তোলার পর ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা বেছে ও ঢেলা ভেঙ্গে মাটি ঝুরঝুরে করা হয়।
বিঘা প্রতি ৩৩ শতকে ইউরিয়া ৩০ কেজি, টিএসপি ৩৩ কেজি, পটাশ ৪০ কেজি, জিপসাম ২৫ কেজি,
বোরন ১.৫০ কেজি, জিংক ১ কেজি (আলাদাভাবে) প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও শতক প্রতি ৯১০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০০ গ্রাম টিএসপি, পটাশ ১২০০ গ্রাম, জিপসাম ৭৫০ গ্রাম
বোরন ৪৫ গ্রাম, জিংক ৩০ গ্রাম আলাদাভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি।
সম্পূর্ণ গোবর+টিএসপি+জিপসাম+বোরন+জিংক (আলাদাভাবে) ও অর্ধেক ইউরিয়া ও পটাশ সার জমি তৈরির শেষ চাষে প্রয়োগ করতে হবে।
বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ও পটাশ সার দুই কিস্তিতে
২৫ দিন বয়সে ও ৫০ দিন বয়সে প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়াও রসুনের জমিতে ছাই প্রয়োগ করলে মাটি আলগা থাকে ও ফলন বেশি হয়।
সেচ পদ্ধতি: রসুনের কোয়া লাগিয়েই একবার সেচ দেওয়া হয়। চারা একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে ১০-১৫ দিন অন্তর সেচ দিতে হয়। রসুনের জমিতে বিশেষ করে কন্দ গঠনের সময় উপযুক্ত পরিমানে রস থাকা দরকার। সেচ এবং বেশী দিন দীর্ঘ দিবসের অভাবে আমাদের দেশে রসুনের ফলন কম হয়।
রসুনের ক্ষেতে মাটির চটা বাঁধা কন্দের বৃদ্ধির পরিপন্থি। পানি সেচের পর মাটির জো আসার সাথে সাথে চটা ভেঙ্গে এবং সেই সাথে আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে। রসুন কোনো অবস্থাতে পানিবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
সুতরাং জমিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেচ প্রয়োগের ৩০-৬০ মিনিট পর সেচ নালা খুলে দিতে হবে। পানি সেচ অবশ্যই ফসল উত্তোলনের ৩ সপ্তাহ পূর্ব থেকে বন্ধ রাখতে হবে।
আগাছা নিড়ানির সময়:
রসুনের চারা যখন বড় হতে থাকে তখন জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে। কন্দ গঠনের আগ পর্যন্ত ২-৩ টি নিড়ানি দিয়ে, আগাছা পরিস্কার ও মাটি আলগা করে দেওয়া উচিত। রসুনের জমিতে হাল্কাভাবে নিড়ানি দেওয়া প্রয়োজন, যাতে শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
কখন ফসল তুলবেন?
রসুন রোপণের ৪-৫ মাস পর পাতার অগ্রভাগ হলদে বা বাদামী হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকলে বুঝতে হবে রসুন পরিপক্ব হয়েছে । এক্ষেত্রে কন্দের বাইরের দিকে কোয়াগুলি পুষ্ট হয়ে লম্বালম্বি ফুলে উঠে এবং দুইটি কোয়ার মাঝে খাঁজ দেখা যায়। হাত দিয়ে গাছ টেনে তুলে মাটি ঝেড়ে পরিস্কার করা হয়। এর পর কন্দগুলি ৩-৪ দিন ছায়ায় রেখে শুকানো হয়। তারপর কন্দ থেকে কান্ড কেটে গুদামজাত করা হয়।
হেক্টর প্রতি কেমন ফলন উৎপাদন হবে?
আমাদের দেশে জাতীয় গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১২ মেট্রিক টন
সংরক্ষণ পদ্ধতি:
ভালভাবে শুকানো রসুন আলো-বাতাস চলাচলযুক্ত ঘরের শুকনা মেঝেতে বা মাচায় সহজেই ৫-৬ মাস রাখা যেতে পারে। বেনী বেধে ঝুলিয়ে রাখলে রসুনের গুনাগুণ ও মান ভালো থাকে।
অতিথি প্রতিবেদক
মোঃ ফরিদুল ইসলাম
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা
কালিগঞ্জ, লালমনিরহাট।